বর্তমান অর্পিত সম্পত্তি আইনের বৈশিষ্ট্য লেখ

অর্পিত সম্পত্তি আইনের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর

ভূমিকা: অর্পিত সম্পত্তি আইন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বহুল আলোচিত আইন। মূলত ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর পাকিস্তান সরকার ভারতে চলে যাওয়া নাগরিকদের সম্পত্তিকে “শত্রুসম্পত্তি” হিসেবে ঘোষণা করে, যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর “অর্পিত সম্পত্তি” নামে পরিচিত হয়।

বর্তমান অর্পিত সম্পত্তি আইনের বৈশিষ্ট্য লেখ

এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকা সম্পত্তিগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ ও প্রকৃত মালিকদের কাছে ফেরত প্রদান নিশ্চিত করা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আইনটি সংশোধন ও সংস্কারের মাধ্যমে নতুন আঙ্গিকে প্রণীত হয়েছে, যাতে এর প্রয়োগে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও সংখ্যালঘু নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণ করা যায়। বর্তমানে ২০০১ সালের অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন এবং ২০১১ সালের সংশোধিত আইনের মাধ্যমে সরকারের দখলে থাকা ও বেসরকারি দখলে থাকা সম্পত্তির তালিকা প্রণয়ন, সহ-অংশীদারদের অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং জনস্বার্থে সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার নিয়মাবলি স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হয়েছে।

বর্তমানে অর্পিত সম্পত্তি আইনের বৈশিষ্ট্য:

নিচে বর্তমানে অর্পিত সম্পত্তি আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা করা হলো।


১। 'ক' তফসিলে সরকারের দখলে থাকা সম্পত্তির তালিকা প্রকাশিত হয়েছে এবং 'খ' তফসিলে সয়ফারি তালিকাতে থাকা যেসব সম্পত্তি সরকারের দখলে নেই, ব্যক্তির দখলে আছে, তার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। 'ক' তালিকার সম্পত্তি ফেরত পেতে হলে জেলা জজের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা যাবে এবং 'খ' তালিকার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) নেতৃত্বে গঠিত কমিটি বা ট্রাইব্যুনালের কাছে গেজেট বিজ্ঞপ্তির ৩০০ দিনের মধ্যে উক্ত সম্পত্তির অবমুক্তির জন্য আকোন করতে হবে। এবার মালিক এবং সম্পত্তির তালিকা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। ২। এখানে সহ-অংশীদারদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এমনকি 'জনস্বার্থ বলতে কোন সম্পত্তি বোঝানো হয়েছে। তাও পরিষ্কার করা হয়েছে। জনহিতকর সম্পত্তির ক্ষেত্রে, সম্পত্তিটি দেবোত্তর সম্পত্তি, শ্মশান বা সাতব্য প্রতিষ্ঠান হলে এবং এর কোনো মোহস্ত বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার যে কোনো নাগরিককে গেজেট প্রকাশের ৩০০ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে দরখাস্ত করার সুযোগ রাখা হয়েছে। সেই ধরনের কোনো নাগরিক উৎসাহিত না হলে জেলা প্রশাসক একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করে তাদের বরাবরে উক্ত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ করবেন।


৩। অতীতের ভুল ত্রুটিগুলো শুধরে নতুন আঙ্গিকে আইনটিকে সাজানো হয়েছে। তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তির মালিকানাসংক্রান্ত বিতর্কের ব্যাপারে সরকার এবং আইন বিভাগকেও মনে হচ্ছে আপাতদৃষ্টিতে আন্তরিক। একই সঙ্গে দেশের সুশীল সমাজও বিষয়টির অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ। করছেন। ভুক্তভোগীদের জন্য এখনই সময় মালিকানার দাবি সঠিক ফোরামে তুলে ধরার। মনে রাখতে হবে, এ আইনের সুফল যাতে বঞ্চিতদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সবার।


৪। পূর্বের আইনে সহ অংশীদারদের দাবি মানা হলেও একই পরিবারের সদস্য অথচ অংশীদার নন তাদেরকে নামমাত্র মূল্যে/প্রতীকী মূল্যে অর্পিত সম্পত্তি ফেরত দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ভাই ভাইয়ের সম্পত্তিরসহ অংশীদার না হলেও এক ভাইয়ের অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি অপর ভাইকে ইজারা বা লিজ দেওয়াতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু এই বিলে সেটি সন্নিবেশিত করা হয় নি। আর তাই ক্ষতিগ্রস্তরা এর সুফল পাবে না।


৫। এখানে উল্লেখ করা হয়েছে যদি কোনো ব্যক্তি অথবা সংস্থাকে স্থায়ীভাবে এসব সম্পত্তির ইজারা দেওয়া হয় তবে সেগুলোর প্রত্যর্পণের দরকার নেই কিন্তু তা যদি না দেওয়া হয় তবে সেগুলো অবশ্যই অংশীদারদের মাঝে ফিরিয়ে দেয়া উচিত।


৩। এই আইনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো হতে মালিক এবং সম্পত্তির তালিকা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।


৭। এই আইনের সুফল যাতে ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত পায় তারও ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।


উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের ১৯৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেসকল পাকিস্তানি নাগরিক পাকিস্তান ও পূর্ব বাংলা ছেড়ে ভারতে চলে গিয়েছিল পাক সরকার তাদের সম্পত্তিকে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে। বর্তমানে ২০১১ সালের সংশোধিত আইনের অধীনে ইতোমধ্যেই প্রতিটি জেলায় ছোটি ছোট তফসিল প্রকাশিত হয়েছে। তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তির মালিকানাসংক্রান্ত বিতর্কের ব্যাপারে এবং আইন বিভাগকেও মনে হচ্ছে আপাতদৃষ্টিতে আন্তরিক।

No comments:

Post a Comment